আন্তঃউপজেলা এবং আন্তঃজেলা পর্ব শেষে এবার চূড়ান্ত পর্বের পালা। শুরু হচ্ছে ‘শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস ২০২৩’র চূড়ান্ত পর্বে লড়াই। আজ সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথি হিসেবে গেমসের চূড়ান্ত পর্বের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন। তবে ইতোমধ্যে ভলিবল ও দাবা ইভেন্ট শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের(বিওএ) ব্যবস্থাপনায় ২০১৮ সালে প্রথমবারের মতো যুব গেমসের আয়োজন করা হয়েছিল। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনে জাতীয় দলের জন্য ভবিষ্যৎ খেলোয়াড় বাছাই এবং তরুণ ক্রীড়াবিদদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দেওয়াই ছিল গেমসের মূল লক্ষ্য।
একইসঙ্গে তরুণ ক্রীড়াবিদদের দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করতেই বিওএ এ উদ্যোগ নেয়। প্রতিচার বছরে একটি বাংলাদেশ গেমস ও ২০১৮ সাল থেকে যুব গেমস আয়োজন করে আসছে বিওএ। প্রথম আসরে ২১টি ডিসিপ্লিনে ৫০ হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, কর্মকর্তা ও ক্রীড়া সংগঠক অংশ নিয়েছিল। এবার দ্বিতীয় আসরে ২৪টি ডিসিপ্লিনে ৬০ হাজার হাজার ক্রীড়াবিদ, কোচ, কর্মকর্তা ও ক্রীড়া সংগঠক অংশগ্রহণ করছে।
চূড়ান্ত পর্বে ২৪টি ডিসিপ্লিনের (তরুণ-তরুণী, একক-দলীয়) ১৯৩টি ইভেন্টে ১৯৩টি স্বর্ণ, ১৯৩টি রৌপ্য ও ২৮৭টি তাম্র পদকের জন্য প্রায় চার হাজার ক্রীড়াবিদ লড়াই করবেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জেষ্ঠ্য পুত্র শেখ কামালের নামে যুব গেমসের এ আসরের নামকরণ করা হয়েছে ‘শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস ২০২৩। ’
এবারের গেমসও আন্তঃউপজেলা, জেলা, ও বিভাগ বা জাতীয়- এই তিন স্তরে পরিচালিত হচ্ছে। গত ২-১০ জানুয়ারি প্রথম পর্বে আন্তঃউপজেলা ও ১৬-২২ জানুয়ারি দ্বিতীয় পর্বে আন্তঃজেলা পর্বের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আটটি বিভাগ থেকে বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে ঢাকায় জাতীয় পর্যায়ের খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমস সুষ্ঠ ও সফলভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক করে একটি সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। কো-চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবং বিওএ সভাপতি ও সেনাবাহনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। এছাড়াও গেমস আয়োজনের রয়েছে স্টিয়ারিং কমিটি এবং ১৩টি উপ-কমিটি।
গেমসের চূড়ান্ত পর্ব উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য মশাল র্যালি শুরু হয়। র্যালির আগে মশাল প্রজ্বালন করেন বিওএ সভাপতি ও সেনাবাহনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। টুঙ্গিপাড়া থেকে বিভিন্ন জেলা প্রদক্ষিণ করে মশাল বিওএ ভবনে আসে। বিওএ ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে মশাল গ্রহণ করেন মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা।
এরপর মশালটি ঢাকা আবাহনী লিমিটেড ক্লাব প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। আবাহনী মাঠ থেকে মশাল নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা সেনানিবাসের স্টোর রুমে। সেখান থেকে মশালটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানস্থল বনানী আর্মি স্টেডিয়মে নেওয়া হবে। আগামীকাল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মশাল প্রজ্বালন করবেন এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২৩ এ স্বর্ণপদকজয়ী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান ও ১৩তম এসএ গেমস ২০১৯ এ স্বর্ণপদকজয়ী কারাতেকা মারজান আক্তার।
গেমসে অংশগ্রহণকারী ক্রীড়াবিদদের পক্ষে শপথ বাক্য পাঠ করবেন বাংলাদেশের দ্রুততম মানবী শিরিন আক্তার। বিচারকদের পক্ষে শপথ বাক্য পাঠ করবেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত সাবেক ফিফা এলিট রেফারি তৈয়ব হাসান শামসুজ্জামান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা থাকছে?
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় গেমস আয়োজনে সবকিছুতেই কৃচ্ছ্র তা সাধনে মনযোগী বিওএ। ফলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঝাক-জমক পরিহার করে দেশীয় কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের কথা মাথায় রেখে আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। মূল অনুষ্ঠান শুরুর একঘণ্টা ৩০ মিনিট আগে স্টেডিয়ামের গেট খুলে দেওয়া হবে। এর পর ৩০ মিনিট ডিজিটাল কন্টেন্ট শো।
প্রধান অতিথির স্টেডিয়ামে আগমন সন্ধ্যা সাতটায়। শুরুতে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করবে আর্মি ব্যান্ডদল। এরপর গেমসের বিভিন্ন ইভেন্টের অডিও ভিজ্যুয়াল কন্টেন্ট প্রদর্শনী। খেলোয়াড়রা মাঠে প্রবেশের পর শপথ গ্রহণ। নির্ধারিত অতিথিদের বক্তব্য। এরপর প্রধান অতিথি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গেমস চূড়ান্ত পর্বের উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।
মশাল বহনকারী দুই অ্যাথলেট মাঠে প্রবেশ করবেন। মশাল প্রজ্বালনের পর থাকছে অডিও ভিজ্যুয়াল প্রর্দশনী। খেলোয়াড়রা মাঠ ছাড়লে থিম সং পরিবেশিত হবে। এএসপিটিএস এবং ভারতীয় হোমসের ডিসপ্লের পর তিন মিনিটের আতসবাজির মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে।
শেখ কামাল দ্বিতীয় বাংলাদেশ যুব গেমসের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এসেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস, সাইফ পাওয়ারটেক ও ওয়ালটন। গেমসে ২৪টি ডিসিপ্লিন তাদের স্ব স্ব ফেডারেশনের তত্ত্বাবধানে ঢাকার বিভিন্ন ভেন্যুতে সাত দিনব্যাপী চলবে।
গেমসের সূচি
২৭ ফেব্রুয়ারি-৩ মার্চ আর্মি স্টেডিয়ামের সেনা নিয়ন্ত্রন বোর্ডের বাস্কেটবল কোর্টে বাস্কেটবল, ২৬ ফেব্রুয়ারি-৩ মার্চ আউটার স্টেডিয়াম (পল্টন ময়দান) ও বাফুফের আর্টিফিসিয়াল টার্ফ মাঠে ফুটবল, ২৬ ফেব্রুয়ারি-২ মার্চ শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়মে হ্যান্ডবল, ২৬ ফেব্রুয়ারি-২ মার্চ মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামে হকি, ২৬ ফেব্রুয়ারি-৩ মার্চ কাবাডি স্টেডিয়ামে কাবাডি, ১-৩ মার্চ পল্টন ময়দানে রাগবী।
২৫ ফেব্রুয়ারি-১ মার্চ শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেয়িামে ভলিবল, ১-৩ মার্চ টঙ্গীস্থ শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে আরচ্যারি, ১-৩ মার্চ বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে এ্যাথলেটিকস, ২৬-২৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ তাজউদ্দিন ইনডোর স্টেডিয়ামে ব্যাডমিন্টন। ২৭ ফেব্রুয়ারি-২ মার্চ মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে বক্সিং, ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দাবা ক্রীড়া কক্ষে দাবা, ১-৩ মার্চ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জিমন্যেসিয়ামে জিমন্যাস্টিকস, ২৬-২৮ ফেব্রুয়ারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে জুডো।
১-২ মার্চ শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে কারাতে, ১-৩ মার্চ বাংলাদেশ শ্যূটিং স্পোর্টস ফেডারেশনে শ্যূটিং, ২-৪ মার্চ সৈয়দ নজরুল ইসলাম জাতীয় সুইমিং কমপ্লেক্সে সাঁতার, ২৮ ফেব্রুয়ারি-২ মার্চ আর্মি স্কোয়াশ কমপ্লেক্সে স্কোয়াশ, ২৭-২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে সাইক্লিং, ১-৩ মার্চ শহীদ তাজউদ্দিন ইনডোর স্টেডিয়ামে টেবিল টেনিস, ২৬-২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ জিমন্যেসিয়ামে তায়কোয়ানডো, ২৭ ফেব্রুয়ারি-১ মার্চ আর্মি স্টেডিয়ামের সেনা ক্রীড়া নিয়ন্ত্রন বোর্ডের উশু শেডে ভারোত্তোলন, ১-৩ মার্চ শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে কুস্তি ও ২-৪ মার্চ শহীদ নূর হোসেন জাতীয় ভলিবল স্টেডিয়ামে উশু প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে।
তরুণ ও তরুণী বিভাগের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট সমাপনী দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে।
আগামী ৪ মার্চ পর্দা নামবে সাতদিন ব্যপী শেখ কামাল ২য় বাংলাদেশ যুব গেমসের। বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিওএ সভাপতি ও সেবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।